মোঃ শাহনেওয়াজ,কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মেলে। কিন্তু অনিয়মের দায় স্বীকার করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নাম বাদ দিয়ে অপর ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কৈফিয়ত তলব করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জবাবদিহিতার জন্য কৈফিয়তের আওতায় না আনায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট দুদক গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট্য একটি প্রতিনিধি দল ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ওষুধ সংরক্ষণাগার, বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগ, ল্যাব, ভর্তি ওয়ার্ড ও হাসপাতালের রান্নাঘর, জেনারেটর, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি মেশিনসহ যন্ত্রপাতি ও রোগীদের খাদ্য অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পান। পাশাপাশি রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরের ল্যাবে করানোরও প্রমাণ পান তারা। দুদক এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশিদকে দায়ী করে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদে ডাঃ রেজওয়ানা রশিদ সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারেননি এবং একপর্যায়ে তিনি নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নেন।
হাসপাতালে অনিয়মের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগষ্ট গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মামুনুর রহমান স্বাক্ষরিত সি.এস.গাজী/প্রশা/কৈফিয়ত/২০২৫/১৬০১/৮ নং স্মারকমূলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ রেজাউল হক, প্রধান সহকারী কাম-হিসাবরক্ষক এটিএম কামরুজ্জামান, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবু সাহিদ, নার্সিং সুপারভাইজার কনক রোজারিও, সিনিয়র স্টাফ নার্স জ্যাকসি রোজারিও এবং ফার্মাসিস্ট মুহাম্মদ গোলাম সারোয়ার, মোঃ আসাদুজ্জামান খান ও মনোতোষ সরকারের নামে কৈফিয়ত তলব করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে প্রধান অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশিদের নামে কোন কৈফিয়ত তলব করা হয়নি। ডা. রেজওয়ানা রশিদ নিজের দায় এড়াতে অধস্তনদের উপর দূর্ণীতির দায় চাপানোর জন্য অসাধুপায় অবলম্বন করেছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
ডাঃ রেজওয়ানা রশিদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজ দপ্তরে সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত খরচে একজন সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন এবং তার জন্য অফিস কক্ষে টেবিলের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও কোনো পদে না থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি তার স্বামীকে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে রাখেন।
একাধিক অভিযোগ থাকার পরও কেন ডাঃ রেজওয়ানা রশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মামুনুর রহমান বলেন, “আমি তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। যেহেতু সে ওই হাসপাতালে মাত্র কয়েক মাস আগে যোগদান করেছে তাই তাকে লিখিতভাবে কোন নোটিশ প্রদান করিনি। তবে তার ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শোকজের একটি নোটিশ কপি আমার কাছে প্রস্তুত করা আছে। আজকের মধ্যেই তার কাছে নোটিশের কপি পাঠানো হবে।”
© All rights reserved © 2023
Leave a Reply