৫ আগস্টের পর থেকে দেশে লাগাতার বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পাথর লুটপাট, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিজ দলীয় কোন্দলে ১৬০+ খুন, অফিস-আদালত ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার— এসব এখন নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে।
তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না, ছাত্র সংসদ নির্বাচনও চায় না,জুলাই সনদ বাস্তবায়ন’ও চাইনা, তারা ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া চিহ্ন চুপ্পুর পদত্যাগ চাই না,ওয়াকারের পদত্যাগ চাই না, আবার লীগ ও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হোক সেটাও তাদের দাবি নয়। বরং নিজেদের স্বার্থে টাকার বিনিময়ে লীগ কর্মীদের পুনর্বাসন করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
একসময় যে সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো, আজ সেই সংবিধান পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে কেন? যে সংবিধান বারবার শেখ হাসিনা নিজের মতো করে সংশোধন করেছেন, যে সংবিধান হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছে, সেটিতেই এখন হঠাৎ এত মধু খুঁজে পাচ্ছে কেন?
যখনই এসব কুকর্ম মিডিয়ায় প্রকাশ্যে চলে আসে এবং তীব্র সমালোচনা হয়, তখন নাটকীয়ভাবে কয়েকজনকে বহিষ্কার করে জনগণকে আইওয়াশ দেওয়ার চেষ্টা করে। আর কেউ প্রতিবাদ করলে—লীগের ধাঁচেই সেই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর দমন করার চেষ্টা চলে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, যেসব ভারতীয় প্রেসক্রিপশননির্ভর বয়ান একসময় আওয়ামী লীগ দিত এবং তারা তার বিরোধিতা করত, এখন তারাই হুবহু সেই একই চেতনার বুলি আওড়াচ্ছে। যেন স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও ‘পাকিস্তানপন্থী’ ‘মৌলবাদ’ আখ্যা দেওয়া ও ‘একাত্তরের চেতনা’র ব্যবসাই হয়ে উঠেছে অপরাধ ঢেকে দেওয়ার বৈধতার হাতিয়ার।
অথচ এই দেশে বাস্তবে কোনো পাকিস্তানপন্থীর অস্তিত্বই নেই। এমনকি ওদের সাথে সীমানাগত কোনো সম্পর্কও নেই। যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা হলো ভারতপন্থী কিংবা দিল্লিপন্থী। কারণ এদেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় কেউ পাকিস্তানে নেয়নি, নিয়েছে ভারতে। এর জীবন্ত প্রমাণ হলো ৫ আগস্টের ঘটনা।
ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আমার বিশ্বাস, যদি দেশে আবার ফ্যাসিবাদী আওমীলীগ ফিরে আসে, তার জন্য একমাত্র দায়ী হবে এই দলটির কৃতকর্ম। তাদের কিছুই হবে না, কিন্তু বলির পাঠা বানানো হবে ইসলামপন্থীদল ও আলেম-ওলামাদের। ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষ বলতে শুরু করেছে—“এর চেয়ে আগেই ভালো ছিলাম।” যদিও সেটা হয়তো আপাতত রাগ আর অভিমানে বলা, কিন্তু যদি এই অবস্থার অবসান না ঘটে, শিগগিরই সেটা মন থেকে উচ্চারিত হতে শুরু করবে।
তাই বলি ভাই, এসব পুরনো কৌশল ও পুরনো বন্দবস্তয় ক্ষমতার খেলায় না গিয়ে—দেশ নিয়ে নতুন করে ভাবুন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করুন। সকল মত ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। সবাইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিন।
লীগ নাই বলে এখন সবকিছু কেবল আপনাদের ইচ্ছেমতো চলবে, প্রতিটি জায়গায় কেবল আপনাদের আধিপত্য থাকবে—এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসুন। কারণ এই মানসিকতা লালন করা ফ্যাসিবাদী আচরণ। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় আপনাদের মধ্যকার গুটিকয়েকজন সুবিধাবাদী ছাড়া অধিকাংশই মজলুম ছিলেন। এজন্যই আমরা আপনাদেরকেও ভালোবাসি, তাই আপনাদেরকে জালিম হয়ে উঠতে দিবো না। ইনশাআল্লাহ্।
© All rights reserved © 2023
Leave a Reply