মনির খান নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।
নড়াইলের কালিয়ায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফকে কেন্দ্রীয় কমিটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলার ভিত্তিতে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুপুর ১২টায় উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর ১টায় কালিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে স্থানীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন স্তরের সমর্থকরা অংশ নিয়ে ইউসুফের পক্ষে স্লোগান দেন এবং বহিষ্কারাদেশ দ্রুত প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, কালিয়া বিএনপির জনপ্রিয় নেতা সেলিম রেজা ইউসুফকে হঠাৎ করেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে কালিয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠেছে এবং নড়াইল জেলার রাজনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বহিষ্কারাদেশ ঘোষণা করা হয়। ইউসুফ অভিযোগ করেছেন, তাকে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ বা আত্মপক্ষ শিকারের সুযোগ দেওয়া হয়নি। শোকজ না করে সরাসরি বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাকে আগে আত্মপক্ষ শিকারের নোটিশ দিতে পারতো বা শোকজ করতে পারতো। কিন্তু কিছুই না জানিয়ে আমাকে সরাসরি বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এটি সাংগঠনিক ও আইনি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউসুফ আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালত এখনো আমাকে দোষী ঘোষণা করেনি। একজন অভিযুক্তকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা যেতে পারে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া ঠিক নয়। আমি চাই, কেন্দ্রীয় কমিটি একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত সত্য যাচাই করুক।”
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন বলেন, “সেলিম রেজা ইউসুফ একজন পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতা। আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমন নেতাকে হঠাৎ করে বহিষ্কার করলে দল ভেঙে পড়বে। মামলা চলাকালীন সময়ে কোনো নেতাকে সরাসরি বহিষ্কার করা যায় না। আদালত এখনো তাকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি—সঠিক তদন্ত ও যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হোক। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
টেক্সাস বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন,“সেলিম রেজা ইউসুফ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলার সাক্ষীর মধ্যে দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই ষড়যন্ত্রমূলক। কেন্দ্রীয় কমিটি যেন বিষয়টি বাস্তবতা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।”
উপজেলা বিএনপির সহ-সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিঠু বলেন,“একজন ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাকে এমনভাবে বহিষ্কার করা মানে পুরো সংগঠনকে দুর্বল করা। মামলা সাজানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেন্দ্রীয় কমিটি যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত সংশোধন করে এবং ইউসুফকে তার পদে পুনর্বহাল করে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ইউসুফের দীর্ঘদিন ধরে মতপার্থক্য চলে আসছিল। দল পরিচালনায় ভিন্ন কৌশল, গ্রুপিং এবং সাংগঠনিক প্রভাব বিস্তারের কারণে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বই মূলত ইউসুফের বহিষ্কারের পেছনের বড় কারণ। অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তটিকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ নয়, বরং “গ্রুপিংয়ের বলি” হিসেবে দেখছেন।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা একবাক্যে বলেন,“সেলিম রেজা ইউসুফকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বহিষ্কার করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দলীয় ঐক্যের জন্য হানিকর। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি—বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে ইউসুফকে তার পদে পুনর্বহাল করা হোক।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফ, কালিয়া পৌরসভার সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, টেক্সাস বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিঠু, সাবেক পৌর কমিশনার স. ম. একরাম রেজা, কালিয়া পৌর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলম এবং বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
© All rights reserved © 2023
Leave a Reply