আব্দুর রউফ দুদু ,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শালীহর গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে বীর মুক্তিযুদ্ধা আবুল হাসিমের পিতা বিশিষ্ট পাট ব্যাবসায়ী ছাবেদ হোসেন বেপারীকে পাক হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।মুক্তিযোদ্ধে ৫৩ বছরে ও তিনি শহীদ হিসাবে স্বীকৃতি পেলেন না।
৭১ এর এই দিনে হানাদার বাহিনী শালীহর গ্রামে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে।গণ হত্যা চালিয়ে নিরিহ ১৪ গ্রামবাসীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে পুড়িয়ে দেয় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ী। ছাবেদ হোসেন বেপারীসহ এই গ্রামের শহীদরা মুক্তিযুদ্ধে ৫৩ বছরে ও কোন স্বীকৃতি মেলেনি।
শালীহর গ্রামের বীর মুক্তিযুদ্ধা আশোতোশ রায় (আশো বাহিনী) ১৯৭১এর ২০ আগষ্ট রাতে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন, ব্রিজ, ব্রিজে পাহারারত রাজাকার হত্যা,গ্রেনেড চার্জ করে টেনিফোন একচেঞ্জ ধবংস করে দেয় । মুক্তিযোদ্ধাদের এ সব অপারেশনের খবর পেয়ে ময়মনসিংহ হানাদার ক্যাম্প থেকে পাক বাহিনী বিপুল সমরাস্ত্র নিয়ে রেলযোগে বিসকা স্টেশন পার হয়ে মুলাকান্দি নামক স্থানে রেলওয়ে খালাসিদের কোয়াটার সংলগ্ন ট্রেনটি থামে। পাক বাহিনী অবাঙ্গালী বিসকা স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শালীহর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাড়ী খোজে যাত্রা করে। পথচারী বৃদ্ধা জ্ঞানেন্দ্র কর পাক বাহিনীর মুখোমুখি হন। তার কাছে আবুল হাসিমের বাড়ীর অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বাড়ীটি চিনেন না বলে জানিয়ে দেন। গ্রামের জনৈক মেম্বারকে জিজ্ঞাস করলে মেম্বার পাক বাহিনীকে বাড়ীটি দেখিয়ে দেন। জ্ঞানেন্দ্র করের মিথ্যাচার পাক আর্মিদের কাছে ধরা পরে যায়। সাথে সাথেই ক্ষুব্ধ পাক সেনা জ্ঞানেন্দ্র কর ও তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মোহিনী মহন করকে গুলি করে বুক ঝাঝড়া করে দেয়।
এ সময় বাড়ী থেকে পাক আর্মিরা বীর মুক্তিযুদ্ধা আবুল হাসিমকে না পেয়ে তার বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে আটক করে এবং বাড়ীটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
শহীদ ছাবেদ হোসেন বেপারীর ছোট সন্তান মোঃ আঃ রউফ বলেন,পাক আর্মি আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযুদ্ধা আবুল হাসিমকে ধরার জন্য আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে। এ সময় আমার বাবা আড়াল থেকে পাক বাহিনীর সামনে চলে আসেন। আর্মিরা আমার বাবা আমাদের বাড়ীতে অবস্থানরত ছোট ভগ্নীপতি জর্জ কোর্টের পেশকার হরমুজ আলীকে ধরে নিয়ে বিসকা স্টেশন সংলগ্ন একটি ফাকা জায়গায় আটকিয়ে রাখে। এখানে এলাকার বহু মানুষকে ধরে এনে পাক বাহিনী বেধে রাখে। এর মধ্যে ১১ নং সাব সেক্টর কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর বোন জামাই সিও (রাজস্ব) কর্মকর্তা এ এস এম আবদুল গফুর, পৌরসভা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল আহসান দিবাকরের পিতা আব্দুর রহমান, ও মামা আহম্মদ হোসেনকে ধরে নিয়ে যায়, পরে বিকেলে অন্যন্যদের সাথে ছেড়ে দেয়।
ইংরেজি ও উর্দু জানা সিও (রাজস্ব) কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল গফুর সাহেব হানাদারদের সাথে বিতর্ক করলে তিনজনকে মুক্ত করে দেয়। কিন্তু বীর মুক্তিযুদ্ধার আবুল হাসিমের পিতা
ছাবেদ হোসেন বেপারীকে না ছেড়ে ট্রেনে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তিনি আর ফেরত আসেননি।
৭১ এ গণহত্যার অন্যান নিহতরা হলেন-মোহিনী মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস,নবর আলী, কিরদা সুন্দরী,শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস,খৈলাশ চন্দ্র নম দাস,শক্রোগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার,অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরন বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, ছাবেদ হোসেন বেপারীর নাতনি ১৪৮ ময়মনসিংহ - ৩ গৌরীপুর জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য এডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি। তিনি জাতীয় "দৈনিক ভোরের ডাককে" দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,আমার দাদু আজও মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পায় নি যা আমাদের পরিবারের সকলের জন্য অনেক কষ্ট ও দুঃখের বিষয়।
আমি খুব দ্রুতই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সাথে কথা বলবো যেন তাকে খুব দ্রুত মুত্তিযোদ্ধার খেতাব দেওয়া হয়।