স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁ টু বগুড়া সড়কের বাইপাস সড়কের দুই পাশে সারিসারি তালগাছ। বাইপাস সড়কের দুই পাশের মধ্যে দক্ষিন পাশের বাইপাস শিবপুর সেতু থেকে বোয়ালিয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে ৬ থেকে ৭ শতাধিক তালগাছের মাথার মুজি পযর্ন্ত নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কেটে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে নওগাঁ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা ও নওগাঁ উন্নয়ন ফোরাম বৃহস্প্রতিবার নওগাঁ টু বগুড়া সড়কের বাইপাস সড়কে শুক্রবার সকাল ১১টায় ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। নওগাঁ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ বিদ মাহমুদুন নবী বেলাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন ইন্ডিপেন্ডেট টেলিভিশন নওগাঁর সিনিয়র রিপোর্টার সাদেকুল ইসলাম, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার এম আর রকি, সমাজতান্ত্রিক দল নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আলিমুর রেজা রানা, এবি পাটি নওগাঁর সভাপতি এ্যাড আতিকুর রহমান, সুজন নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক একে সাজু প্রমুখ। এসময় বক্তারা নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) দায়ীত্ব অবহেলায় এই পরিবেশ বান্ধব তালগাছের মাথার মুজি পযর্ন্ত কেটে ফেলার তৃব্য নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিলম্বে এই ঘটায় জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শান্তির দাবি ও দ্রুত গাছ রক্ষায় গাছের উপর দিয়ে যাওয়া তার ও খুটি সরিয়ে নেওয়ার আহব্বান জানান।
ওই তালগাছগুলোর পাশ দিয়ে গেছে বিদ্যুতের লাইন। নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) গাছগুলোর পাতা কেটে দিয়েছে। এ সম্পর্কে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালাম বলেন, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ লাইনের আশপাশের বিভিন্ন গাছের ডাল ও পাতা কাটা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপণের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার ও পরিবেশবিদেরা। নওগাঁতে গত কয়েক বছরে সরকারি ও নওগাঁ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ বিদ মাহমুদুন নবী বেলাল এর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৭৫ কিঃ মিঃ সড়কের দুই ধারে প্রায় ৩ লক্ষ তালগাছের চারা রোপণ করেছে। সরকারী ভাবে দেশের শ্রেষ্ট বৃক্ষ রোপন কারী হিসাবে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যেই নওগাঁ পৌরশহরের বাইপাস সড়কের তালগাছের পাতা কেটে দেওয়াই নওগাঁ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ বিদ মাহমুদুন নবী বেলাল এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন।
নওগাঁ পৌরসভার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, নব্বইয়ের দশকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের দুই পাশে তালগাছগুলো রোপণ করা হয়। সেই তালগাছগুলো বড় হয়ে বছরের পর বছর ধরে শোভা ছড়াচ্ছে। বছরে দুবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে সড়কের এক পাশের তালগাছের পাতা ছেঁটে দেন। আর এবার একদম মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ বিদ মাহমুদুন নবী বেলাল বলেন, এভাবে তাল গাছ কাটা উচিত মুটেও ঠিক হয়নি। কারণ, তাল গাছ আমাদের ঝড়, বৃষ্টি ও বিজলী (বিদ্যুৎস্পৃষ্টের) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখি সহ জীব বৈচিত্র্য এবং জীবন বাঁচায়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসব তোয়াক্কা না করে গাছের মাথা কেটেছে। গাছ এভাবে না কেটে বিদ্যুতের খুঁটি একটু সরিয়ে বসালেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে নওগাঁ কাঁঠালতলী এলাকায় নেসকোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, তিলকপুর ও বক্তারপুর এবং বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে বাইপাস সড়কের দুই পাশে খুঁটি বসানো হয়। তখন তালগাছগুলো ছোট ছিল। গাছগুলো বড় হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছর নেসকোর লোকজন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে গাছগুলোর মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছেন। এলাকাবাসী গাছগুলো রক্ষার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।
এ সম্পর্কে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালামের তাঁর ধারণা, তালগাছগুলো লাইন বসানোর পর লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, লাইন সরাতে হলে অন্যের জমির ওপর দিয়ে যাবে হয়তো, তখন আবার স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দেবেন। লাইন স্থানান্তরের খরচও আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রয়োজনে লাইন সরালে বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ বহন করে আর স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সরাতে হলে তাঁদের খরচ বহন করতে হয়।
নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুতের লাইন ও তালগাছ দুটিই সরকারের জায়গায়। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।