মো:সিরাজুল ইসলাম পলাশ,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি
লালমনিরহাটে ঘটনার প্রায় ২বছর পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রেলওয়ে শ্রমিক দল কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।
মামলায় দৈনিক আজকের পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি খোরশেদ আলম সাগরকে আসামী করা হয়েছে। আসামীর তালিকায় জেলার ৩জন ঠিকাদারের নামও রয়েছে। যাদের মধ্যে ২জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা ২টি সড়ক দখলকে কেন্দ্র করে অভিযোগ করায় মামলায় ঠিকাদারদের এবং সংবাদ প্রকাশ করায় ওই সাংবাদিককে হয়রানী করতে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। মামলার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই সড়ক ২টি নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজকের পত্রিকায় “খোঁড়া সড়কে জনদুর্ভোগ” এবং গত ২০ আগস্ট “লালমনিরহাটে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সড়কের সংস্কার কাজ দখলের অভিযোগ” এবং “সড়ক সংস্কার কাজ দখল” শিরোনামে দৈনিক আজকের পত্রিকায় অনলাইন ও প্রিন্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, গতকাল লালমনিরহাট সদর থানায় বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন ফরিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি রেল শ্রমিক দলের সহ-সম্পাদক। মামলায় ১৯জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০-১৫০জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় গতকাল ভোরের দিকে ৩নম্বর আসামী ঠিকাদার এলাহী বকস ও ৪নম্বর আসামী ওই ঠিকাদারের ছেলে শামসুল ইসলামকে কালীগঞ্জের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। অপর ঠিকাদার ও ৫নম্বর আসামী ঠিকাদার শাহ আযম নয়নের বাড়িতেও শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান চালালেও তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল বিকালে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলায় সাংবাদিক সাগরকে ছয় নম্বর আসামী করা হয়েছে।
এজাহারে দাবি করা হয়, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর আসামীরা লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় থাকা রেলশ্রমিক দল কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এজাহারে ঠিকাদার এলাহীকে নির্দেশদাতাদের একজন এবং তার ছেলেসহ অপর ঠিকাদার ও সাংবাদিক সাগরের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র মতে, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ৩কিলোমিটার ৯৩মিটার এবং চলবলায় ৫কিলোমিটার ২৫০মিটার সড়ক উন্নয়ন বা পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৩কোটি ৯১লক্ষ ১৬হাজার ৫শত ১৯টাকা এবং ৫কোটি ৮৭হাজার ৬শত ৭টাকা। দরপত্র অনুযায়ী চন্দ্রপুরে মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং চলবলায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কাজ বাস্তাবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে মনোনীত হয়। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান ২টি পারফরমেন্স সিকিউরিটি বা কার্যসম্পাদন জামানত জমা দিয়েছে। এখন চুক্তিপত্র তৈরি সাপেক্ষে বাস্তবায়নকারী দপ্তর কার্যাদেশ দিলে কাজ শুরুর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির।
তবে অভিযোগ রয়েছে, গত মাসে সড়ক ২টি দখলে নিয়ে কাজ শুরু করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে পৃথক ২টি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চলবলা ইউনিয়নের দুহুলী-জোরগাছ সড়কের ব্যাপারে অভিযোগে বলা হয়, কাজটি না করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
তাতেও কাজ না হওয়ায় ৭ আগস্ট রাস্তাটি দখল করে মাটি কাটা শুরু করা হয়। এতে দখলদার হিসেবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ইসলাম এবং সাহাদাত হোসেন নামের এক ঠিকাদারের নাম উল্লেখ রয়েছে।
অপরদিকে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বুড়িরহাট-চন্দ্রপুর সড়কের কাজের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়, কে বা কার নেতৃত্বে পলাশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ১৫ আগস্ট থেকে জোর করে সড়কে মাটি কাটা শুরু করেন।
দুই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডির কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে ইউএনও মোছাঃ জাকিয়া সুলতানা দুটি রাস্তা পরিদর্শন শেষে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের নির্বাহী পরিচালক এলাহী বকস। অপরদিকে বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের পক্ষে কাজ তদারকির দায়িত্ব পাওয়া স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বর্ণা ট্রেডার্সের মালিক শাহ আযম নয়ন। তারা দুজনেই লিখিতভাবে পৃথক পৃথক ভাবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ও সমস্যা নিরসনে আবেদন করেছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার এলাহী বকস ও শাহ আযম নয়ন বিএনপি নেতাদের রাস্তা দখলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোয় এবং আজকের পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করায় তাদের শায়েস্তা করাসহ ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পরিকল্পিতভাবে দলীয় কার্যালয় ভাঙার মিথ্যা অভিযোগে তাদের নামে মামলা করেছে।
সাংবাদিকের নামে এ ধরণের মামলা করায় জেলার সাংবাদিকরা ফুঁসে উঠেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেও নেতারাও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহারসহ রাস্তা দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টার এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জেলার ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহনে বাধ্য হবে।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ নূরনবী বলেন, এ মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিকের নাম রয়েছে তা মামলা হওয়ার পরে জানতে পেয়েছি।